0 / 0
5118/জিলহজ/1446 , 14/জুন/2025

বীর্য ও কামরসের মাঝে পার্থক্য

প্রশ্ন: 2458

মাঝে মাঝে আমি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ভেতরের কাপড়ে সিক্ততা পাই। আশা করি আপনি এটিকে বীর্য অথবা অনিচ্ছাকৃত পেশাব মনে করবেন না। কারণ পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর স্বাভাবিকভাবে আমার শরীর থেকে কামরস বা আঠালো পদার্থ নির্গত হয়। এই কারণে আমি অধিকাংশ সময় আমার আন্ডার ওয়্যার ও পায়জামা ধুয়ে নিই। ইতঃপূর্বে আমি একটি বইয়ে পড়েছি যে, যদি নির্গত বস্তুতে বীর্য না থাকে এবং কেবল কামরস হয় তাহলে গোসল আবশ্যক হয় না। নামাযের জন্য শুধু অযু করে নিলেই হয়। যদি এমনই হয় তাহলে পোশাকের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? আমি লক্ষ্য করেছি যে, কখনো বিব্রতকর কিছু পরিস্থিতিতে আমার কামরস বেরিয়ে যায়; যদিও আমি কামরস বের হওয়ার উপলক্ষ তৈরী করে এমন সকল পরিস্থিতি থেকে নিজেকে দূরে রাখি। অতএব, বীর্য ও কামরসের মাঝে পার্থক্য কী?

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

বীর্য ও কামরসের মাঝে পার্থক্য হলো:

১- পুরুষের বীর্য গাঢ় সাদা পানি। আর নারীর বীর্য পাতলা হলুদ। অন্যদিকে কামরস হলো পাতলা পিচ্ছিল পানি যা যৌন কল্পনা অথবা ইচ্ছা পোষণ করলে বেরিয়ে আসে। এটি বের হওয়ার সময় যৌন উত্তেজনা অনুভূত হয় না, এটি সবেগে বের হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর শারীরিক নিস্তেজতা আসে না।

২- বীর্যের কারণে জানাবতের গোসল আবশ্যক হয়, হোক সেটি যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে কিংবা স্বপ্নদোষের ফলে। অন্যদিকে কামরস বের হলে কেবল অযু আবশ্যক হয়।

৩- আলেমদের প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত অনুসারে বীর্য পবিত্র, অন্যদিকে কামরস নাপাকি।

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ
উত্তর

বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বীর্য ও কামরসের মধ্যে পার্থক্য

পুরুষের বীর্য গাঢ় সাদা পানি। আর নারীর বীর্য পাতলা হলুদ পানি। বীর্যের এ বৈশিষ্ট্যগুলোর ক্ষেত্রে দলীল হলো উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, তিনি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন যে, পুরুষ ঘুমের মধ্যে যা দেখে কোন নারীও তা দেখলে? তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘যদি কোন মহিলা তা দেখে তাহলে তার উচিত গোসল করা।’ উম্মে সুলাইম বললেন: এ কথায় আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। উম্মে সুলাইম বললেন, ‘এ রকমও কি হয়?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘হ্যাঁ। তা না হলে সন্তান সাদৃশ্য পায় কোত্থেকে? পুরুষের বীর্য গাঢ় ও সাদা। আর মহিলাদের বীর্য পাতলা ও হলুদ। দুইজনের মধ্যে থেকে যার বীর্য ওপরে উঠে যায় অথবা আগে চলে যায় সন্তান তারই সদৃশ হয়।’[হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন, হাদীসের শব্দ মুসলিমের (৩৬৩)]

পুরুষের বীর্য গাঢ় সাদা এবং নারীর বীর্য পাতলা হলুদ এই মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে (৩/২২২) বলেন:

‘বীর্যের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। সুস্থ অবস্থায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বীর্য এ ধরনের হয়ে থাকে। আলেমরা বলেন: সুস্থ অবস্থায় পুরুষের বীর্য সাদা ও গাঢ়। দফায় দফায় সবেগে তা বের হয়। উত্তেজনাসহ নির্গত হয়। বীর্য বের হওয়ার সময় পুরুষ সুখ অনুভব করে। বেরিয়ে যাওয়ার পরে নিস্তেজতা পেয়ে বসে। এর গন্ধ খেজুর গাছের মঞ্জরির মতো, যা আবার ময়দার খামিরের গন্ধের কাছাকাছি।... (তবে বীর্যের রং বিভিন্ন কারণে বদলে যেতে পারে, সে সমস্ত কারণের মাঝে রয়েছে:)... অসুস্থ হলে বীর্য পাতলা ও হলুদ হয়ে যায় কিংবা বীর্য বের হওয়ার অঙ্গ নিস্তেজ হয়ে যায় তখন কোনো সুখানুভূতি ও উত্তেজনা ছাড়াই বেরিয়ে পড়ে। অথবা বেশি পরিমাণে সহবাস করলে লাল হয়ে মাংসের রং ধারণ করে এমনকি খাঁটি রক্তও বের হতে পারে।... বীর্যকে বীর্য হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর নির্ভর করা হয় সেগুলো তিনটি: এক: উত্তেজনাসহ বের হওয়া এবং বের হওয়ার পর নিস্তেজতা অনুভব করা। দুই: গাছের মঞ্জরির মতো গন্ধ হওয়া যেমনটি ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে। তিন: কয়েক দফায় সবেগে বের হওয়া। এই তিনটির যে কোনো একটি বীর্য প্রমাণের জন্য যথেষ্ট; তিনটি একত্র হওয়া শর্ত নয়। যদি তিনটির কোনোটি পাওয়া না যায় তাহলে সেটি বীর্য বলে গণ্য করা হবে না এবং প্রবল ধারণা অনুসারে সেটি বীর্য নয়। এই সমস্ত বক্তব্য পুরুষের বীর্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর নারীর বীর্য হলুদ ও পাতলা। নারীর শক্তি বেশি হলে এটি সাদাও হতে পারে। নারীর বীর্যের আরো দুটি বৈশিষ্ট্য আছে; এ দুটোর কোনো একটির মাধ্যমেও নারীর বীর্যকে চেনা যায়। সে দুটি হলো, এক: এর গন্ধ পুরুষের বীর্যের গন্ধের মতো। দুই: এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় এবং বেরিয়ে যাওয়ার পরে নিস্তেজতা এসে পড়ে।’[সমাপ্ত]

অন্যদিকে কামরস হলো সাদা পিচ্ছিল পানি। যৌন কল্পনা অথবা ইচ্ছা করলে এটি বেরিয়ে যায়। এই কামরস বের হওয়ার সময়ে কামনা অনুভূত হয় না, কয়েক দফায় বের হয় না এবং এর পরে নিস্তেজতা আসে না। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই। তবে পুরুষদের চেয়ে নারীদের থেকে বেশি বের হয়। ইমাম নববী শরহে মুসলিম (২/২১৩) গ্রন্থে এমনটি বলেন।

মানুষের শরীর থেকে নির্গত বীর্য ও কামরসের হুকুমগত পার্থক্য

বীর্য বের হলে গোসল আবশ্যক হয়; হোক সেটা জাগ্রত অবস্থায় সহবাসের মাধ্যমে বা অন্য কিছুর মাধ্যমে কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষের কারণে। অন্যদিকে কামরসে কেবল অযু আবশ্যক হয়। এর প্রমাণ হলো আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন: আমার বেশি বেশি কামরস নির্গত হতো। আমি মিকদাদকে বললাম যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি তাকে বললেন: “এর জন্য অযু করতে হবে।”[হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেন] ইবনে কুদামা ‘আল-মুগনী’ (১/১৬৮) গ্রন্থে বলেন: ‘ইবনুল মুনযির বলেন: আলেমরা এ ব্যাপারে ইজমা করেছেন যে, পশ্চাদ্দেশ থেকে পায়খানা, আর নারী-পুরুষের সম্মুখদেশ থেকে পেশাব ও কামরস এবং গুহ্যদ্বার থেকে বায়ু বের হওয়া এই সবগুলো ঘটনার প্রত্যেকটি পবিত্রতা বিনষ্ট করে।’

পবিত্রতা ও নাপাকির দিক থেকে বীর্য ও কামরসের পার্থক্য

আলেমদের প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত অনুসারে বীর্য পবিত্র। এর প্রমাণ হলো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বীর্য ধুয়ে সেই কাপড় পরে নামাযে বেরিয়ে যেতেন। আমি তার কাপড়ে থাকা ধোয়ার চিহ্নের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।[হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন] মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে এটি খুঁটিয়ে দূর করতাম। তারপর তিনি তাতে নামায পড়তেন। অন্য এক পাঠে আছে: এটি শুষ্ক হয়ে যাওয়া অবস্থায় আমি আমার নখ দিয়ে তার কাপড় থেকে ঘষে তুলতাম।

বরং এমনটিও বর্ণিত আছে যে তিনি সিক্ত বীর্যও ধুইতেন না। কেবল কাঠি বা অন্য কিছু একটা দিয়ে মুছে ফেলতেন। ইমাম আহমদ মুসনাদে (৬/২৪৩) বর্ণনা করেন: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইযখির ঘাসের গোড়া দিয়ে তাঁর জামা থেকে বীর্য মুছে ফেলে সেই জামা দিয়ে নামায পড়তেন। শুষ্ক অবস্থায় সেটি খুঁটিয়ে দূর করে তাতেই নামায পড়তেন। হাদীসটি ইবনে খুযাইমা তার সহিহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। শাইখ আলবানী ইরওয়া (১/১৯৭) গ্রন্থে এটিকে হাসান বলে গণ্য করেন।

অন্যদিকে আলী (রাঃ) এর উপর্যুক্ত হাদীস অনুসারে কামরস নাপাক। ঐ হাদীসের কিছু বর্ণনায় আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধৌত করা এবং অযু করার নির্দেশ প্রদান করেন যেমনটি আবু উয়ানা তার ‘মুস্তাখরাজ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। ইবনে হাজার ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে বলেন: ‘এই হাদীসটির সনদে কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং কামরস নাপাক। এটি বের হলে পবিত্রতা নষ্ট হয় এবং এর জন্য পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধোয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে।’

বীর্য ও কামরস কোনো কাপড়ে লাগলে সেটার হুকুম

বীর্যকে পবিত্র বলার মতের ভিত্তিতে কোনো কাপড়ে বীর্য লাগলে সেটি নাপাক হয়ে যায় না। কোনো মানুষ যদি ঐ কাপড়ে নামায আদায় করে তাহলে এতে কোনো আপত্তি নেই। ইবনে কুদামা ‘আল-মুগনী’ (১/৭৬৩) গ্রন্থে বলেন: ‘আমরা যদি এটিকে পবিত্র বলি তাহলে এটি খুঁটিয়ে পরিষ্কার করা মুস্তাহাব। যদি খুঁটিয়ে দূর করা ছাড়াও নামায পড়ে, নামায পড়া জায়েয হবে।’

অন্যদিকে কামরসের ক্ষেত্রে কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। কেননা এছাড়া ভিন্ন কিছু করা কঠিন। এর প্রমাণ হলো আবু দাউদ ‘সুনান’ কিতাবে সাহল ইবনে হানীফ থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন: আমার বেশি বেশি কামরস নির্গত হতো। আমি বেশি বেশি গোসল করতাম। তখন এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন: ‘তোমার জন্য এ ক্ষেত্রে অযু করাই যথেষ্ট।’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাপড়ে যা লাগে সেটির ক্ষেত্রে কী হবে?’ তিনি বললেন: ‘তুমি এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কাপড়ের যেখানে লেগেছে মনে হয় সেখানে ছিটিয়ে দিবে।’[হাদীসটি তিরমিযী বর্ণনা করেন এবং বলেন: এটি হাসান সহিহ হাদীস। আমরা কামরসের ব্যাপারে কেবল মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের হাদীস থেকেই অনুরূপ জানতে পারি][সমাপ্ত]

তুহফাতুল আহওয়াযী প্রণেতা (১/৩৭৩) বলেন: ‘এই হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান করা হয়েছে যে কোনো কাপড়ে কামরস লাগলে তাতে কেবল পানি ছিটিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। কাপড়টি ধৌত করা আবশ্যক নয়।’

আল্লাহ তায়ালাই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

answer

সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তরসমূহ

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
বীর্য ও কামরসের মাঝে পার্থক্য - ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব